- Taher's Newsletter
- Posts
- ওয়েব অটোমেশন এবং স্ক্র্যাপিংয়ের হালাল হারাম - ইথিকাল ব্যালেন্স
ওয়েব অটোমেশন এবং স্ক্র্যাপিংয়ের হালাল হারাম - ইথিকাল ব্যালেন্স
অন্যের পারমিশন ছাড়া তার ডাটা কালেক্ট করা কি উচিৎ?
হাসপাতালের করিডোরে বসে আছেন আপনি, মাথার ভেতর যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। রোগীর অবস্থা, পকেটে টাকা নেই, চাকরির দরকার—সব মিলিয়ে জীবন যেন একটা মেগা ড্রামা সিরিয়াল! এর মধ্যে মোবাইলের স্ক্রিনটা বারবার জ্বলে উঠে, আপনি ভাবেন—এবার বুঝি কোনো ভালো খবর আসবে। হয়তো ব্লাড লাগবে বলে কেউ ফোন দিচ্ছে, কিংবা হাসপাতালের কাউন্টার থেকে ডাকছে।
ঠিক এমন সময়, একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল। আপনি একটু চমকে উঠে ধরলেন, মনে মনে ভাবলেন, “আহা, হয়তো দরকারি কিছু!”
ওপাশে এক ভদ্রলোক, গলায় অতি উৎসাহী হাসি—
— “স্যার, আমাদের ডিমের কোম্পানির নতুন অফার আছে, শুনবেন?”
শুনেই আপনার মাথা গরম!
— “ভাই, আমি হাসপাতালে আছি, দয়া করে বিরক্ত করবেন না।”
কল কেটে দিলেন, মনে মনে গজগজ করতে থাকলেন—“এরা এতবার বলার পরও নাম্বার পায় কোথা থেকে! কেউ তো অনুমতি দেয়নি!”
তবুও, জীবন থেমে থাকে না। কিছুক্ষণ পর আবার একটা অপরিচিত নাম্বার। এবার একটু দ্বিধা নিয়ে ধরলেন।
ওপাশে কেউ বলল,
— “ভাই, আমি অমুক কোম্পানির এইচআর, আপনার পোর্টফোলিওতে আপনার নাম্বার পেয়েছি, একটা চাকরির বিষয়ে কথা বলতে চাই।”
আপনি এবার বিরক্ত হলেন না, বরং মনে হলো, “আহা! এটাই তো সেই কাঙ্ক্ষিত কল!”
— “ভাই, আমি আসলে হাসপাতালে আছি, একটু পরে কথা বলতে পারি?”
ওপাশে মানুষটা সম্মতি দিয়ে রাখল। আপনি মনে মনে ভাবলেন, “এই কলটা তো আমার জন্য লাইফলাইন!”
এতসব ঘটনার মাঝে হঠাৎই মনে পড়ল, “আরে, আমি তো কিছুদিন আগে একটা জব পোর্টালে নিজের নাম্বার দিয়ে রেখেছিলাম, নিজের পোর্টফোলিওতেও শেয়ার করেছিলাম! তখন তো ভেবেছিলাম, কেউ যদি ভালো কোনো চাকরির সুযোগ দেয়, মন্দ কী?”
এখন সেই নাম্বার দিয়েই তো এইচআর ভাইয়া কল দিয়েছে।
একটু আগের বিরক্তিটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
নিজের মনেই হাসলেন—“আসলে, নিজের প্রয়োজনেই তো নাম্বারটা দিয়েছিলাম। কেউ চাকরির জন্য ফোন দিলে খুশিই তো লাগার কথা!”
তবে ডিম কোম্পানির কলটা নিয়ে আবার মনে পড়ল, “এইসব অফার আসা কি খুব দরকার ছিল?”
তারপর ভাবলেন, “আচ্ছা, যদি একদিন ডিমের দরকার হয়, তখন এই কলটাই হয়তো কাজে লাগবে!” কিন্তু আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো চরম বিরক্তিতে ব্লক করে দেয়ার চেষ্টা করতো, কিংবা সোশাল মিডিয়ায় রাগান্বিত হয়ে একটা পোস্ট করে ফেলতো।
জীবন আসলে এমনই—একটা নাম্বার, কত রকম গল্প! কখনো বিরক্তি, কখনো আশার আলো, কখনো আবার হুট করে এসে যায় হাসির খোরাক।
হাসপাতালের করিডোরে বসে, ক্লান্ত চোখে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে, আপনি ঠিক করলেন
আগামীবার নাম্বার কোথায় দেবেন, একটু ভেবেচিন্তে দেবেন।
আর এখন?
হয়তো আবার একটা কল আসবে—এবার কে জানে, সেটা ডিমের অফার, চাকরির ইন্টারভিউ, নাকি হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে চা-ওয়ালার বিল!
জীবন তো, ভাই, এমনই—একটু হাসি, একটু বিরক্তি, আর মাঝে মাঝে একদম অপ্রত্যাশিত কিছু!
দেখুন ওয়েব অটোমেশন কি হালাল নাকি হারাম সেই প্রশ্নে যাবার আগে প্রশ্ন হতে হবে ওয়েব অটোমেশন বা স্ক্র্যাপিং আপনি কিভাবে করতেসেন, এবং করার সময় আপনার নিয়ত ঠিক কি ছিল।
কয়েকটা কেইস শেয়ার করি। কেইস বাই কেইস জিনিসগুলাকে চিন্তা করে আপনি নিজেই বিচার করে নিবেন ঠিক কোনটা উচিৎ এবং কোনটা অনুচিত।
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন। এর অনেক কাজের একটা কাজ হলো, অনলাইনে বিভিন্ন পেইজ ঘুরে বেড়ানো। বিভিন্ন পেইজ ঘুরে ঘুরে কোথায় কোন ইমেইজে বাচ্চাদের এবিউজের কিছু পেলে সেগুলো রিপোর্ট করা এবং সরানোর জন্য চেষ্টা করা। এই কাজটা যখন ম্যাস স্কেলে করার প্রয়োজন হয়, তখন অটোমেশন আর স্ক্র্যাপিং এমনিতেই লাগে, কারণ একটা একটা করে ছবি কালেক্ট করে এনালাইসিস করে দেখা বেশ সময়সাপেক্ষ্য একটা কাজ।
লন্ডনে একটা ডাটাবেইজ আছে, চাইল্ড এবিউজ ইমেইজ ডাটাবেইজ। সার্চ দিলেই পাবেন। এই ডাটাবেইজ এবং এদের মধ্যে থাকা টুলসগুলো দিয়ে বাচ্চাদের এবিউজ করা হয়েছে কিনা সেটা সহজে বের করা যায়। আর এই ডাটাবেইজের জন্য পুলিশ ফোর্স, ক্রাইম এজেন্সি, ল এনফোর্সমেন্ট সহ অনেক সংস্থা কাজ করে থাকে। কথা হলো তারা এত ডাটা কোথায় পায়?
স্পটলাইট নামে একটা সার্ভিস আছে। তারা বিভিন্ন এসকোর্ট সাইট, ফোরাম, ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস মনিটর করে থাকে। সেইসব সাইটে বিভিন্ন পোস্ট এনালাইসিস করে তারা বিভিন্ন ইলিগাল ট্রাফিকিং নেটওয়ার্কগুলোকে ধরে থাকে, যার মাধ্যমে বাচ্চা ও ভিক্টিমদের খুঁজে বের করা সহজ হয়।
প্রচুর টুলস ও সার্ভিস আছে যারা বিভিন্ন টেম্পোরারি ইমেইল সার্ভিসগুলো মনিটর করে থাকে, এই মনিটর করা ডাটাগুলো পরবর্তীতে এনরিচ করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে স্প্যাম সাইনআপ আটকাতে সাহায্য করে। এইসব সার্ভিসগুলোর অনেকগুলোতেই অনেক রকম বট প্রটেকশন থাকে, যার কারণে এগুলো মনিটর করতে গেলেও আপনাকে বট প্রটেকশন বাইপাস সম্পর্কে জানা লাগবে। হাজার হাজার টেম্পোরারি ইমেইল সার্ভিস মনিটর করা ম্যানুয়ালি রীতিমত অসম্ভব।
হেইট স্পিচ, এক্ট্রিমিস্ট সহ অনেক রকম ডাটা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইটে মনিটর বসানো হয়, যেগুলো একটা রিয়েল ইউজারের মতই আচরণ করে এবং বিভিন্ন পোস্টে এনগেইজড হয়ে একজন মানুষ কেমন আচরণ করে সেটা ধরতে পারে।
এগুলার বাইরে ওয়েব অটোমেশনের ব্যাপক ইউজকেইস হলো রিক্রুটমেন্ট, ইউআই টেস্টিং, প্রাইস মনিটরিং, বিজনেস এনালাইসিস, সহ আরো অনেক কাজে।
আপনি একটা ডেভেলপার খুঁজতেসেন যারা নির্দিষ্টভাবে লারাভেল কিংবা রিএক্ট পারে। আপনি রিএক্ট বা লারাভেলের রিপোজিটরিতে কারা একটিভ আছে তাদের প্রফাইলে গিয়ে যদি কোন একটা ইমেইল পান, কিংবা ওয়েবসাইটের এড্রেস পান; সেখান থেকে তা কালেক্ট করে তাদেরকে জব অফার পাঠান, তাহলে এটা একটা আউটরিচ মেথড হিসাবে ধরা হয়। যা ডাটা কালেক্ট করেছেন তা পাবলিক হলে ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে যায়।
কিন্তু একই ইমেইল কালেক্ট করে আপনি ধরেন ডিমের মার্কেটিং করা শুরু করলেন, স্বাভাবিকভাবে পাবলিক ডাটা হবার পরেও গিটহাবে নিশ্চয়ই আপনি ডিমের মেইল পাবার জন্য ইমেইল এড্রেস দিয়ে রাখেন নাই। সেখানে এই মার্কেটিং ট্যাক্টিক ধরা খেয়ে গেল।
সার্চ ইন্জিন এনালাইসিস টুলসগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন যত টুলস আছে, বেশিরভাগই একটা ওয়েবসাইটের ডাটা কালেক্ট করতে হয় সেটার লোড টাইম সহ সবকিছু এনালাইসিস করতে গিয়ে। এখানে যদিও আপনি কনসেন্ট দিচ্ছেন, তবুও অনেক সময় কিন্তু আপনি আপনার কম্পিটিশনের ওয়েবসাইটের এড্রেসও দিচ্ছেন, আর সেই টুলসগুলো আপনার হয়ে টার্গেট ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স আপনাকে বলে দিচ্ছে।
আপনার ওয়েবসাইটে আপনি একটা ছোট ফিচার এড করতে গিয়ে দেখা গেল পুরা লগিন পেইজ কাজ করা বন্ধ করে দিলো, কিন্তু আপনি সেটা জানেনই না। যদি আপনি প্রতিটা কমিটে বা পুল রিকুয়েস্টে অটোমেটেড টেস্ট রাখতেন, তাহলে এমন জিনিস প্রডাকশনে যাবার আগেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মজার বিষয় হলো, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন এআই সার্চ ইন্জিন সার্ভিসে এগুলাতে কাজ করতে গেলে আপনাকে স্ক্র্যাপিং আর অটোমেশন নিয়ে হয়তো কাজ করা লাগতে পারে। কারণ আপনি যা নিয়ে সার্চ করবেন তা সাধারণত কোন না কোন ওয়েবসাইট থেকে পুল করেই রিয়েল টাইমে এনালাইজ করে দেখানো হয়। কিন্তু এই একই কোম্পানী, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক নিজেদের ডাটা আবার কাউকে স্ক্র্যাপ করতে দেয় না। মানে আপনি এগুলাতে কাজ করতে গেলে যেই স্কিল থাকা লাগবে, এগুলার বাইরে গেলেই সেইম জিনিসগুলাকে খারাপভাবে দেখা হচ্ছে।
জেনারেল সেন্সে বিষয়টা এরকম,
যদি পাবলিক ডাটা হয়, এবং ওয়েবসাইট এলো করে, তাহলে এতে কোন সমস্যা নাই।
ওয়েবসাইটে কোন কিছু বলেনাই, কিন্তু অনলাইনে নরমালি এটা সমস্যা হয় না, তাহলে কোন সমস্যা নাই।
ওয়েবসাইটে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে আপনি এই ডাটা নিয়ে কি করবেন সেটা সরাসরি দেখতে হবে।
ওয়েবসাইটে নিষেধ করে নাই, কিন্তু ইন্টারনেটে জেনারেল রুলসে এটা নিষেধ করসে, তাহলে এখানে বেশ মতবিবেধ দেখা গিয়েছে।
এ ব্যাপারে আলেম ও শায়েখদের কিছু সরাসরি ও বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
যদি প্রাইভেট ডাটা হয়, আর ব্যক্তির কনসেন্ট না থাকে, তাহলে এতে সমস্যা আছে। শায়েখ মুহাম্মদ আবু বকর বাধিব, এবং শায়েখ মুহাম্মদ কর এই দুইজনের রেফারেন্স দিয়ে এ ব্যাপারে একটা পোস্ট পাওয়া যায়।
এমনকি স্প্যামিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়, এমন কোন সফটওয়ার বা টুলস তৈরি করার পিছনে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা সব জায়গায় করা হয়। এটার কারণে লিগাল ইস্যুও ফেইস করা লাগতে পারে। মুফতি ইব্রাহিম দেসাই-য়ের রেফারেন্সে এখানে একটা পোস্ট পাওয়া যায়।
এছাড়া লিগাল কমপ্লায়েন্সের জন্য কয়েকটা গাইডলাইন দেয়া হয় ডাটা কালেক্ট করার সময়।
ইউজারের প্রাইভেট ডাটা কালেক্ট করতে হলে অবশ্যই ইউজারের কনসেন্ট লাগবে।
কালেক্টেড ডাটা এনলাইসিস করে, এনালাইজড ডাটা রাখা গেলেও কালেক্টেড ডাটা রিমুভ করে ফেলতে হবে, স্টোর করা যাবে না।
অথেনটিকেশন থাকুক বা না থাকুক, রোবোটস ফাইল রেসপেক্ট করতে হবে।
এভাবে প্রতিটি কাজে একটা নিয়ত, কনসেন্ট, বেনেফিট, ট্রাস্ট, জাস্টিস, সততা সহ অনেকগুলো বিষয় জড়িত থাকার কারণে, ঢালাওভাবে একটা বিশাল সেক্টরকে বাদ দিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।
তো বোঝাই যাচ্ছে বিষয়টা বেশ কম্প্লিকেটেড একটা বিষয়। অটোমেশন এর স্কিলটা একটা ছুরির মত, আপনি চাইলে অপরাধ করতে পারেন, কিংবা রান্নার কাজে ব্যয় করতে পারেন। আপনি যেই স্কিল দিয়ে একটা ওয়েবসাইট ও প্রডাক্ট মনিটর করতে পারেন, সেইম একই স্কিল দিয়ে ডাটা এনরিচমেন্টের কাজ করতে পারেন, কিংবা ওয়েবসাইটের ফাংশনালিটি ও পারফরমেন্স চেক করতে পারেন।
এ ব্যাপারে একটা হাদিস মাথায় রাখতে পারেন।
“প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। কাজেই যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই ধরা হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভ অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যই ধরা হবে।”
পরিশেষে, আপনার উচিত হবে আপনি যেই কাজই করেন না কেন, একজন বিশেষজ্ঞ আলেমের সাথে আলোচনা করে নিবেন, তাকে আপনার কাজের প্রসেস এবং ইনটেন্ট, নিয়ত সহ সব বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন। ডাক্তারকে রোগ ভালো করে বুঝিয়ে না বললে ভুল চিকিৎসা হতে পারে, ব্যাপারটা মাথায় রেখে এগুবেন।
Reply