• Taher's Newsletter
  • Posts
  • কেয়ামত হয়ে গেলেও এআই যেটা করতে পারবে না

কেয়ামত হয়ে গেলেও এআই যেটা করতে পারবে না

এআই সব করতে পারলেও একটা কাজ করতে পারবে না, লাইক অসম্ভব, কোটি বছরেও পারবে না, কেয়ামত হয়ে গেলেও পারবে না।

একটা কথা দিয়ে শুরু করি। এআই সব করতে পারলেও একটা কাজ করতে পারবে না, লাইক অসম্ভব, কোটি বছরেও পারবে না, কেয়ামত হয়ে গেলেও পারবে না। সেটা হলো আল্লাহর ইবাদাত করতে পারবে না। আর মানুষকে দুনিয়ায় কেন পাঠানো হইসে জানেন ত? আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য।

এবার বাকিটা পড়েন।

---

যেই আমি জাস্ট ৫ বছর আগে সবাইকে গুগলে সার্চ করতে বলতাম, সেই আমিই আস্তে আস্তে গুগল সার্চ করা কমিয়ে দিয়েছি, রেজাল্টগুলা ভাল হয় না, বেশ ফালতু হয়, লেখাগুলা পড়ে শান্তি পাইনা। এখন দরকার হলে ডাকডাকগোতে সার্চ করি, নাহলে পারপেক্সিলিটি, ক্লডি, জিপিটি, ডিপসিক সহ বিভিন্ন এআই প্লাটফর্মগুলাতে।

যদিও এখনো ফোন আর সব রকম ডিভাইসে গুগলের প্রডাক্ট দেয়া, খুব ডিপ ভাবে প্রতিটা জিনিস ইনটিগ্রেট করা, তারপরেও, সার্চের অবস্থা ত মারাত্বক। লং টার্ম ধরে আজাইরা এডস বসায়ে, আজাইরা রেজাল্ট দেখায়ে গুগল সার্চ কি আমার মত একটা কাস্টমার হারিয়ে ফেলতেসে না?

এআই এসে কোথায় কোথায় ইফেক্ট করতেসে শুনেন, টেক ইনডাস্ট্রির অবস্থা অন্তত শুনেন। ২০২৫ শুরু হয়নাই এখনো, এতেই পুরো ইনডাস্ট্রিতে এই অবস্থা, ২০২৫ শেষ হলে কি হবে আল্লাহ ভাল জানে।

✳️ ভয়ানকভাবে ইসলামিক কিছু সার্চ করলেও দেখা যাচ্ছে গুগল ইউটিউবের পাশাপাশি এখন এআই সার্চ ইন্জিনগুলাকে নক দিতে হচ্ছে। ওরাই পোস্টগুলা পড়ে সামারি করে দিচ্ছে, বিস্তারিত পড়ার জন্য লিংকও দিয়ে দিচ্ছে। এটা পজিটিভ নেগেটিভ দুইভাবেই ইমপ্যাক্ট করতে পারে। জাস্ট রিসার্চের জন্য হলে এটা ঠিক আছে, ফতোয়ার জন্য না যদিও।

✳️ গিটহাব কোপাইলট, কার্সর, ট্রে, সহ অসংখ্য এআই সাপোর্টেড আইডিই আর এডিটিং টুলস আসতেসে। আগে গার্বেজ সাজেশন দিলেও এখন আস্তে আস্তে ভাল সাজেশন দেয়া শুরু করছে। কোড করতে গেলে বেশ উপকারে আসতেসে, এটা অস্বীকার করা যাবে না।

✳️ বোল্ট, লাভেবল, ইত্যাদি নিজে পুরো একটা এপ বানাতে পারে না সিউর, তবে বেশ ভাল লেভেলে বেসিক ডেভেলপাররা যা করতে পারতো সেগুলো এরাই করতে পারতেসে। যাদের ফাউন্ডেশন দূর্বল কিংবা একটু উপরের লেভেলের জিনিস শিখতেসে না, তারা দ্রুত মার্কেট হারিয়ে ফেলতেসে।

✳️ ফিগমা এআই দিয়ে ডিজাইন করে, দুইটা ক্লিক করে ফ্রেমার বা অন্য রকম কোড জেনারেট করে একেকটা সাইট বা পেইজ বানাতে সময় লাগতেসে না। যেই কাজ কয়েক ঘন্টা লাগতো, সেটা হয়তো কয়েক মিনিটেই ড্রাফট বানিয়ে দিতে পারতেসে, কোয়ালিটি অবশ্যই ওই লেভেলে যায়নি।

✳️ ফায়ারফ্লাই, ডালি, স্ট্যাবল ডিফিশন, আপস্কেল, ফ্রিপিক এআই সহ এত এত টুলস আছে যেগুলার কারণে যারা ফটো এডিটিং নিয়ে কাজ করতেন, সেখানে একটা বড় ইমপ্যাক্ট এসেছে। আগে স্টক ফটোর একটা বিশাল বিজনেস ছিল, সেখানেও এআই নিজেই সব জেনারেট করে দিচ্ছে। কোয়ালিটি যাই হউক, ইমপ্যাক্ট এসেছে।

✳️ এখন শুধু টেক বা ক্রিয়েটিভ ফিল্ড নয়, এআই কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের দিকেও হাত বাড়াচ্ছে। টুলস যেমন জাস্পার, রাইটার, বা কপি.এআই দিয়ে ব্লগ পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন, এমনকি মার্কেটিং ইমেল পর্যন্ত জেনারেট করা যায় মিনিটের মধ্যে। আগে কন্টেন্ট রাইটারদের যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিসার্চ করে লিখতে হত, এখন এআই সেকেন্ডে ড্রাফ্ট তৈরি করে দিচ্ছে। এটা যেমন সময় বাঁচাচ্ছে, তেমনই নতুন রাইটারদের জন্য কম্পিটিশন বাড়াচ্ছে।

✳️ একই ভাবে এআই ড্রিভেন অডিও আর ভিডিও এডিটিং টুলসগুলার দিকেই তাকান, কি একটা অবস্থা। এদিকে ভিডিও এডিটিংয়ে রানওয়ে এমএল, ডেস্ক্রিপ্ট, বা সিনথেসিয়ার মতো টুলস এআই-ড্রাইভেন এডিটিং, অটো-সাবটাইটেল, ভয়েস ক্লোনিং সুবিধা দিচ্ছে। ইউটিউবার বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা এখন হাতের মুঠোয় প্রফেশনাল লেভেলের এডিটিং পাচ্ছেন, যা আগে শুধু এক্সপার্টদের হাতেই ছিল।

✳️ কাস্টমার সার্ভিসের ক্ষেত্রেও এআই-চ্যাটবট যেমন ইন্টারকম, ড্রিফট, বা জেন্ডেস্কের অটোমেশন সিস্টেম এখন কম্পানিগুলোর লাইভ এজেন্টের ওপর চাপ কমিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ কোয়েরিগুলো অটো রেসপন্স করে, কমপ্লেক্স ইস্যুগুলোই শুধু হিউম্যান এজেন্টদের কাছে যায়। এতে কাস্টমার সার্ভিসের খরচ কমলেও, এজেন্টদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে ঝোঁক বাড়াতে হচ্ছে।

✳️ স্বাস্থ্য খাতেও এআই ডায়াগনস্টিক টুলস যেমন আইবিএম ওয়াটসন হেলথ, পাথএআই, বা বুটসহেলথের মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণের গতি ও নির্ভুলতা বাড়তেসে। ডাক্তাররা এখন এআই-এর সাজেশনকে টুল হিসাবে ব্যবহার করতেসে, ডাটা অ্যানালাইসিসে সময় বাঁচাচ্ছে।

✳️ এডুকেশন সেক্টরে খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য খান অ্যাকাডেমির এআই টিউটর, বা কোর্সেরার পার্সোনালাইজড লার্নিং পাথ তৈরি করতেসে নতুন সম্ভাবনা। আগে যেখানে একজন শিক্ষককে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একই লেকচার দিতে হত, এখন এআই প্রত্যেকের লার্নিং পেস ও স্টাইল অনুযায়ী কন্টেন্ট অ্যাডজাস্ট করে দিচ্ছে।

✳️ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে রোবো-অ্যাডভাইজার যেমন বেটারমেন্ট, ওয়েলথফ্রন্ট, বা ক্লিয়ারট্যাক্সের এআই-ট্যাক্স অ্যাসিস্ট্যান্ট সাধারণ মানুষের ইনভেস্টমেন্ট, ট্যাক্স প্ল্যানিং সহজ করে দিচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে এআই ফ্রড ডিটেকশন সিস্টেম প্রতিদিন লেনদেনের ডাটা স্ক্যান করে কোটি কোটি টাকা বাঁচাচ্ছে।

✳️ লিগ্যাল ফিল্ডেও এআই এর প্রভাব অগ্রগামী। টুলস যেমন লিগ্যালজুকে, লজিক্লুড, বা ডোন্টল স্টার্টআপগুলিকে লিগ্যাল ডকুমেন্ট রিভিউ, কন্ট্রাক্ট অটোমেশন, এবং কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করতেসে। এটার্নিদের এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কন্ট্রাক্ট চেক করার প্রয়োজন কমে গেছে, এআই দ্রুত রিস্ক পয়েন্ট হাইলাইট করে দিচ্ছে। তবে জটিল কেস বা কোর্টরুম স্ট্র্যাটেজিতে এখনও মানুষের বিচারক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই।

✳️ এমনকি এগ্রিকালচার, ম্যানুফ্যাকচারিং, বা রিটেইলের মতো ট্র্যাডিশনাল ইন্ডাস্ট্রিতেও এআই-ড্রাইভেন প্রেডিক্টিভ অ্যানালিটিক্স, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, এবং ইনভেন্টরি অপটিমাইজেশনের টুলস কাজের গতিবিধি বদলে দিচ্ছে। ফার্মাররা এখন এআই মডেলের মাধ্যমে ফসলের রোগ শনাক্ত করতে পারতেসে, ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রেডিক্টিভ মেইনটেন্যান্সে ডাউনটাইম ৫০% কমেছে।

কিন্তু এত কিছুর পরেও এআই এখনও "টুল" হিসেবেই থাকতেসে, মানুষের ক্রিয়েটিভিটি, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, বা এমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের জায়গা দখল করতে পারেনি।

তবে বিশ্বাস করেন, এআই জেনারেটেড পোস্ট, এআই জেনারেটেড জেনেরিক ছবি, এআই জেনারেটেড ভিডিও, এআই জেনারেটেড সাপোর্ট রিপ্লাই বেশ বিরক্তিকর হয়ে উঠতেসে। ঠিক আছে, যখন আমি ওকে ডাটা দিচ্ছি, ও আমাকে সেই ডাটার উপর সামারি করে দিচ্ছে, তখন পড়া যাচ্ছে। অন্য সময় আমার মনে হচ্ছে এআই বাদ দিয়ে সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলতে পারলে খুবই ভাল হতো।

সমস্যা হলো, যখন এআইকে ব্লাইন্ডলি ফলো করা হয়, তখন ভুল ডাটা বা বায়াসড অ্যালগরিদম বিপদ বাড়ায়, এআই দিয়ে খুব সুন্দর করে বায়াসড জিনিস শেয়ার করে পুরা একটা জেনারেশনকে ম্যানিপুলেট করা যায়। আবার গুগল সার্চের মতো প্ল্যাটফর্ম যখন এড রেভেনিউকে প্রায়োরিটি দেয়, ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ধ্বস খায়।

আবার এআই যতই এডভান্স হোক, এটার এথিক্যাল ইউজ, ট্রান্সপারেন্সি, এবং হিউম্যান ওভারসাইটের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ আপনারাই জানেন এআই সবচেয়ে বেশি কোন সেক্টরে ব্যবহার করা হচ্ছে—মিলিটারি সেক্টরে। সবাই এত এথিকাল হলে ত দুনিয়ার এই অবস্থা হইতো না।

তো, ভবিষ্যতে যারা এআইকে "অ্যাসিস্ট্যান্ট" বানিয়ে নিজেদের স্কিল শার্প করবে, তারাই টিকবে। আর যারা এআই-নির্ভর হয়ে, কিংবা এআইকে সম্পূর্ণ আগ্রাহ্য করে, কিংবা ভয় পেয়ে নিজেদের লার্নিং থামিয়ে দেবে, তারা হয়তো অটোমেশনের প্রথম শিকারে পরিণত হবে।

বড় কোন যুদ্ধ না লাগলে, ২০২৫ হলো এআইয়ের বছর। জাভাস্ক্রিপ্টের ফ্রেমওয়ার্কের মত প্রতিদিন দেখবেন একটা করে এআই রিলেটেড জিনিস রিলিজ হচ্ছে।

আরেকটা জিনিস বলতে ভুলে গেসি, "Oops! DeepSeek is experiencing high traffic at the moment. Please check back in a little while.", "You've reached your Pro limit, Upgrade to Perplexity Pro to increase your daily limit" এইগুলা হচ্ছে লিমিট। এখনো একদম গরীবদের হাতে এআই পৌছায়নাই, আরেকটু বাকি আছে।

---

একটা কথা দিয়ে শেষ করি। এআই সব করতে পারলেও একটা কাজ করতে পারবে না, লাইক অসম্ভব, কোটি বছরেও পারবে না, কেয়ামত হয়ে গেলেও পারবে না। সেটা হলো আল্লাহর ইবাদাত করতে পারবে না। আর মানুষকে দুনিয়ায় কেন পাঠানো হইসে জানেন ত? আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য।

Reply

or to participate.